শীতকালে প্রায়ই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এতে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় অনেক প্রাণের। কোটি কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতিও হয়। শীত বাড়ার সাথে সাথেই বাড়তে থাকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। ফায়ার সার্ভিস এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়ায়। আর ইমারত বিধিমালা অগ্রাহ্য করে অনেকে একটি ভবনের গা ঘেঁষে নতুন ভবন বানাচ্ছেন। খরচ বাঁচাতে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ওয়্যারিং ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। আগুন যখন লাগে তখন এসব সরঞ্জাম ও গা ঘেঁষে ভবন থাকার কারণেও দ্রুত ছড়ায়।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ডিসেম্বর থেকে মার্চ, এই চার মাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়ে যায়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে আগুনের ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ১২০টি। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ২ হাজার ২৭১টি, ফেব্রুয়ারিতে ২ হাজার ৩৮৩টি, মার্চে ২ হাজার ৬৪৪টি ও এপ্রিলে আগুনের ঘটনা ২ হাজার ৮৬১টি। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আগুনের ঘটনা ঘটে ২ হাজার ৭৬টি। ২০২২ সালের জানুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে প্রায় পাঁচ শতাধিক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শীতে বাতাসে জলকণা কম থাকে। যে কারণে ফায়ার জেনারেটিং ফিল্ড তৈরি হয়। ভবন রক্ষণাবেক্ষণে সিটি করপোরেশন, রাজউক এবং ফায়ার সার্ভিসের মনিটরিংয়ের কথা থাকলেও এতে সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে। আবার আগুন লাগার অন্যতম কারণ হিসেবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের প্রসঙ্গ উঠে আসে অনেক সময়। এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগও চোখে পড়ে না। বিশেষ করে শীতে অনেকে রুম হিটার চালান। ওভেনও বেশি চালানো হয়। এ সময় মালটিপ্লাগের কাজ শেষ হওয়ার পর সুইচ অফ করেন না অনেকে। এতে সামান্য অসাবধানতাতেই শুরু হতে পারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।
আগুন লাগার একটি বড় কারণ ভবনের ওয়্যারিংয়ের কাজে বিশেষ প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা না থাকা। এ বিষয়েও নজরদারিরও ঘাটতি আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘আমাদের বেশিরভাগ ভবনের ওয়্যারিং মানসম্মত নয়। ভবনের গুরুত্বপূর্ণ এ কাজ কাকে দিয়ে করাবেন, তাদের প্রশিক্ষণ রয়েছে কিনা, এসব বিবেচনা করা উচিত। উন্নত দেশে বিষয়টি বড় করে দেখা হয়। দুঃখজনক হচ্ছে আমাদের দেশে এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে সরকারি কোনও মেকানিজম নেই। একটি ভবনে মানসম্মত তার বা ওয়্যারিং হচ্ছে কিনা সেটা বোঝার উপায় থাকে না। এখনকার বিল্ডিং কোডেও এমন নির্দেশনা নেই। আমরা শুনি শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লেগেছে।
অথচ মূল কারণ হচ্ছে ওয়্যারিংয়ের ত্রুটি।’ পদ্মা মাল্টিপারপাস ব্রিজ প্রকল্পের অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘শীতে রুম হিটারগুলো চালানো হয় বেশি। মশার কারণে প্রচুর কয়েলও জ্বালানো হয়। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা থাকে কম। ঠান্ডা এবং কুয়াশা আগুন প্রতিরোধে কাজ করে না উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক দিনমণি শর্মা বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে সুইচ বোর্ড ও এসির সংযোগস্থলে কানেকশন লুজ থাকায় শর্ট সার্কিট ঘটে। কাজ শেষে মাল্টিপ্লাগের সুইচ অফ না করলেও ভোল্টেজের লোডের কারণে অনেক সময় সেটা উত্তপ্ত হয়ে আগুন ধরে যায়।’
সাথী
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।